রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও মিলেনি ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও মিলেনি ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচার

দেশের ইতিহাসে অন্যতম হৃদয় বিদারক ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ধস। কিন্তু ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার পাননি। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ও অল্পের জন্য প্রাণ নিয়ে ফেরার স্মৃতি স্মরণ করে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাঁদলেন শ্রমিকরা।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তীব্র তাপদাহের মধ্যে ব্যানার প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে পোশাক শ্রমিকরা মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্যে দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে একজন আকলিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘ভবন ধসের পর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ছিলাম। দুর্ঘটনার এত বছর পরও আমি কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। অথচ আমাদের ঘামে কত পোশাক বিদেশে যায়, অনেক বিদেশিরা আমাদের প্রশংসা করে। কিন্তু আমার পরিবার থাকে অনহারে।’ মামলার আসামি সোহেল রানাসহ অন্যান্য দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন আকলিমা বেগম।

পোশাক শ্রমিকদের আরেকজন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের দুইটা হাতই নাই। পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে আমি এখনো যে কতজনের কাছে যাই পাওনা টাকাগুলোর জন্য। শুনছি সরকার ব্যবস্থা করছে, কিন্তু আমাদের কাছে তো টাকা আসেনি।’

মানববন্ধনে শ্রমিকরা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই বিক্ষোভ আর মানবন্ধন করে আসছেন তারা। প্রতিশ্রুতি পেলেও ক্ষতিপূরণ পাননি। রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরে তার এ ঘটনায় দোষীদের বিচার পাননি। মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। দীর্ঘ এই সময় ধরেই স্বজন হারিয়ে, পঙ্গুত্ব নিয়ে অর্থের অভাবে অনাহারে দিন কাটছে অনেকের।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরও হাজারখানেক তৈরি পোশাক শ্রমিককে।

মানববন্ধনে সোনিয়া আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমি এখন আরেকটা গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করি। আমার ভাইয়ের পাওনার জন্য অনেক মানববন্ধন করেছি। এ রকম রোদে থেকে অনেকের সঙ্গে মিছিল করেছি। কোনো ক্ষতিপূরণ আসেনি। আমরা কি এইভাবে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে খালি কান্না করে যাব? আপনারা কেউ কি আমাদের দিকে তাকাবেন না?’

রানা প্লাজা ধসে নিহতদের স্বজন ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের মানববন্ধনে হাজির হয়ে নিজেদের দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ‘রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার ১১ বছর’ লেখা ব্যানার নিয়ে হাজির হন। কারো কারো হাতে ছিল ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে রানাসহ সকলের নজিরবিহীন শাস্তি চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রানা প্লাজা ভিকটিমস’, ‘এনসিওর রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড জব ফর রানা প্লাজা ভিকটিমস’ লেখা প্ল্যাকার্ড।

সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, ‘আপনারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কান্নার কথা, বেদনার কথা শুনেছেন। আমরা আর কত শ্রমিকদের লাশ হতে দেখব শুধু মালিক ও সরকারের অবহেলা আর অতি মুনাফার কারণে।’

শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে বীমার আওতায় আনা; মাতৃকালীন ছুটি ছয় মাস নির্ধারণ; কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি সব প্রকার সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন ও আইএলওর সনদ ১৯০ অনুস্বাক্ষর করা এবং করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডাইরেকটিভে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সব সদস্যদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান আন্দোলনকারী শ্রমিকরা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:১৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]